জাতীয় সংসদ ভবন বাংলাদেশের গণতন্ত্রের কেন্দ্রীয় স্থান হিসেবে পরিচিত। ১৯৮২ সালের ২৮ জানুয়ারি এটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। এই ভবন শুধু আইনের নীতিগুলো প্রণয়নের জায়গা নয়, এটি বাংলাদেশের জাতীয় ঐতিহ্য এবং স্থাপত্যের পরিচয় বহন করে। আজ ৪৩ বছর পূর্তিতে এই ভবনটি বিগত বছরগুলোতে কি কি দেখেছে তা নিয়ে এই বিশেষ প্রতিবেদন।
জাতীয় সংসদ ভবন এর ইতিহাস
জাতীয় সংসদ ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৯৬১ সালে পাকিস্তান শাসনামলে। এর উদ্দেশ্য ছিল পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য পৃথক আইনসভা তৈরি করা। বিখ্যাত স্থপতি লুই আই কান এই প্রকল্পটির নকশা করেন। ২০ বছরের দীর্ঘ নির্মাণপর্ব শেষে এটি ১৯৮২ সালের ২৮ জানুয়ারি উদ্বোধন করা হয়। সংসদ ভবন উদ্বোধন করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তার।
১৯৮২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় জাতীয় সংসদের অষ্টম অধিবেশনে এই ভবন প্রথমবারের মতো ব্যবহার করা হয়।
পুরাতন সংসদ ভবনের প্রাথমিক ব্যবহার
প্রথম ও দ্বিতীয় জাতীয় সংসদের অধিবেশনগুলো পুরাতন সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত হয়, যা বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
এক নজরে জাতীয় সংসদ ভবনের ০৮ টি বিস্ময়কর তথ্য
১. জাতীয় সংসদ ভবনকে বিশ্বের অন্যতম সেরা আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর উদাহরণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
২. ভবনটি প্রায় ২০০ একর জমির ওপর স্থাপন করা হয়েছে।
৩. লুই আই কান এমনভাবে নকশা করেছেন যাতে দিনের আলো ভবনের প্রতিটি অংশে পৌঁছায়।
৪. ভবনটির চারপাশে কৃত্রিম হ্রদ তৈরি করা হয়েছে, যা স্থাপত্যের ভারসাম্য রক্ষা করে।
৫. ভবনের অভ্যন্তরে কোনো কলাম নেই
৬. লুই আই কান ভবনটি সম্পন্ন করার আগেই মারা যান।
৭. প্রথম জাতীয় সংসদ কখনোই এই ভবনটি ব্যবহার করেনি।
৮. সংসদ কক্ষে ৩৫৪টি আসন রয়েছে, যা ভবিষ্যতে আরও সদস্যের জন্য সম্প্রসারিত করা সম্ভব।
বাংলাদেশের সংসদের মূল মাইলফলকগুলো
বাংলাদেশের প্রথম সংসদ ১৯৭৩ সালে গঠিত হয়। এরপর দ্বিতীয় সংসদ থেকে শুরু করে বর্তমান একাদশ সংসদ (২০১৯–২০২৪) পর্যন্ত জাতীয় সংসদ ভবন ব্যবহার করা হয়েছে। প্রথম সংসদের অধিবেশন ছাড়া বাকি সকল অধিবেশন এই ভবনে অনুষ্ঠিত হয়।
- প্রথম সংসদ (১৯৭৩–১৯৭৫): আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব।
- দ্বিতীয় সংসদ (১৯৭৯–১৯৮২): বিএনপির শাসন।
- একাদশ সংসদ (৫ আগস্ট ২০২৪ এর আগ পর্যন্ত) আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে।
লুই আই কান কে ছিলেন?
লুই ইসাডোর কান, যিনি লুই আই কান নামে পরিচিত, ছিলেন যিনি এস্তোনীয় ইহুদী বংশোদ্ভূত বিশ্ববিখ্যাত মার্কিন স্থপতি। ১৯০১ সালে সাবেক সোভিয়েত রাশিয়ার এস্তোনিয়ায় জন্ম নেওয়া কান স্থাপত্যশিল্পে তার অসাধারণ অবদানের জন্য আজও স্মরণীয়। পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেন।
তার অন্যতম সেরা কীর্তি বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ভবন, যা তার স্থাপত্যশৈলীর এক অনন্য উদাহরণ। ১৯৭৪ সালে ম্যানহাটনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
জাতীয় সংসদ ভবনের বিন্যাস এবং মাপ
ভবনের কাঠামো তিনটি প্রধান অংশে বিভক্ত:
- মূল প্লাজা: ৮২৩,০০০ বর্গফুট।
- দক্ষিণ প্লাজা: ২২৩,০০০ বর্গফুট।
- রাষ্ট্রপতি প্লাজা: ৬৫,০০০ বর্গফুট।
ভবনটির চারপাশে কৃত্রিম হ্রদ, বাগান, এবং সংসদ সদস্যদের জন্য আবাসিক এলাকা রয়েছে। জাতীয় সংসদ ভবন ঢাকার শেরে বাংলা নগর এলাকায় অবস্থিত। এটি চারটি প্রধান সড়ক দ্বারা বেষ্টিত: উত্তরে লেক রোড, পূর্বে রোকেয়া সরণি, দক্ষিণে মানিক মিয়া এভিনিউ এবং পশ্চিমে মিরপুর সড়ক। আরো জানুনঃ সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা ২০২৫ বাতিল হলো কেন?
জাতীয় সংসদ ভবন কিভাবে যাবেন?
ঢাকার যেকোনো স্থান থেকে সিএনজি, বাস, প্রাইভেটকার বা মোটর রাইড সার্ভিসে করে সহজেই জাতীয় সংসদ ভবনে যাওয়া যায়। ভবনটি শেরে বাংলা নগরে অবস্থিত হওয়ায় যাতায়াত ব্যবস্থা খুবই সুবিধাজনক। জাতীয় সংসদ ভবন ট্যুর, সাধারণ জনগণ এবং পর্যটকদের জন্য কিছু অংশ উন্মুক্ত করা হয়েছে। তবে ট্যুর করার আগে নির্ধারিত অনুমতি নিতে হয়। ভ্রমণকারীরা মূলত দক্ষিণ প্লাজার পাশের উন্মুক্ত স্থান পরিদর্শন করতে পারেন।
জাতীয় সংসদ ভবন কয় কক্ষ বিশিষ্ট?
মূল ভবনে সংসদ অধিবেশন কক্ষ ছাড়াও গ্রন্থাগার, কমিটি কক্ষ, মন্ত্রীদের অফিস, চেয়ারপারসনের অফিস এবং সদস্যদের বিশ্রামের জন্য লাউঞ্জ রয়েছে। পুরো ভবনের মধ্যে ৩৫৪টি আসনের অধিবেশন কক্ষই মূল কেন্দ্রবিন্দু।
জাতীয় সংসদ ভবন বাংলাদেশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র এবং ঐতিহ্যের প্রতীক। এর নকশা এবং গঠনশৈলী একে বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণীয় ভবন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে।
FAQs
১. জাতীয় সংসদ ভবন কোথায় অবস্থিত?
জাতীয় সংসদ ভবন ঢাকার শেরে বাংলা নগর এলাকায় অবস্থিত।
২. জাতীয় সংসদ ভবনের নকশা কে তৈরি করেন?
এর নকশা প্রণয়ন করেন মার্কিন স্থপতি লুই আই কান।
৩. জাতীয় সংসদ ভবনের মোট এলাকা কত?
এর মোট এলাকা ২০০ একর।
৪. জাতীয় সংসদ ভবন কবে উদ্বোধন করা হয়?
১৯৮২ সালের ২৮শে জানুয়ারি এটি উদ্বোধন করা হয়।
৫. জাতীয় সংসদ ভবনে ক’টি আসন রয়েছে?
মূল অধিবেশন কক্ষে ৩৫৪টি আসনের ব্যবস্থা রয়েছে।